পর্যটন জেলা কক্সবাজার রেলপথে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয় ২০২৩ সালের ১লা ডিসেম্বর। বর্তমানে এ রেলপথে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দুটি ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত আরেকটি ট্রেন চলছে। এর বাইরে ঈদ, পূজাসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করছে রেলওয়ে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়,দেশের পশ্চিমাঞ্চলে গত সেপ্টেম্বরে চলাচল করা আন্তঃনগর ট্রেনগুলোয় যাত্রীর গড় অকুপেন্সি ছিল ১১০ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি ১০০ আসনের বিপরীতে যাত্রী পরিবহন করা হয় ১১০ জন। অন্যদিকে পূর্বাঞ্চলে প্রতি ১০০ আসনের বিপরীতে ছিল ৯৪ যাত্রী।
পূর্বাঞ্চলে মোট ৫৪টি আন্তঃনগর ট্রেন পরিচালনা করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগ নিয়ে গঠিত এ অঞ্চলে গত সেপ্টেম্বরে সবচেয়ে বেশি আয় করা ট্রেন কক্সবাজার এক্সপ্রেস। ওই মাসে ট্রেনটি থেকে আয় হয়েছে ৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
রেলের কর্মকর্তাদের হিসাবে পর্যটন জেলা কক্সবাজারের রেলপথ লাভজনক রুটে পরিণত হয়েছে।
২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর চালুর পর থেকেই কক্সবাজার এক্সপ্রেস যাত্রী চাহিদায় শীর্ষে থেকেছে।
রেলওয়ের বাণিজ্যিক ও মার্কেটিং বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, চালুর পর থেকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ট্রেনটি থেকে আয় হয়েছে মোট ৩৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত একটি ট্রেন পরিচালনা করতে রেলের পরিচালন ব্যয় প্রায় ৫ লাখ টাকা।
ঢাকা-কক্সবাজার রুটে প্রতিটি ট্রিপে আয় হয় গড়ে ৭-৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে প্রতি ট্রিপে ২-৩ লাখ টাকা মুনাফা হয়।
সব মিলিয়ে কক্সবাজারে ট্রেন চালিয়ে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৭০ কোটি টাকা আয় করেছে সংস্থাটি। বিপরীতে ট্রেনগুলো পরিচালনায় ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা। লাভের পরিমাণ প্রায় ২৫ কোটি টাকা। এ তথ্য পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের বাণিজ্যিক ও মার্কেটিং বিভাগের।
দেশের অনেকগুলো রুটে পর্যাপ্ত চাহিদা না থাকলেও ট্রেন চলে। আবার অনেক রুটে যাত্রী চাহিদা থাকলেও ট্রেনের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। এমন প্রেক্ষাপটে যাত্রীর চাহিদা অনুযায়ী রুটগুলো পুনর্বিন্যাসের লক্ষ্যে রুট র্যাশনালাইজেশনের উদ্যোগ নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
৫ নভেম্বর সভায় মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব ও ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে রেখে এর জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। এ কমিটি ট্রেনের রুট র্যাশনালাইজেশনের জন্য প্রয়োজনীয় কাজগুলো এগিয়ে নেবে।
এর আগে রেল ভবনে গণমাধ্যমকর্মীদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফর রেল অ্যান্ড রোডের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা করেন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। সেখানে তিনি বলেন, ‘বিগত সময়ে চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক ও ব্যক্তি পর্যায়ের আগ্রহের কারণে বিভিন্ন রুটে ট্রেন চালু করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ট্রেনের স্টপেজ দেয়া হয়েছে। আমরা এসব ট্রেন পুনর্বিন্যাসের উদ্যোগ নিয়েছি। এতে যাত্রীর চাহিদাকেই আমরা একমাত্র প্রাধান্য দেব।’
সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও এডিবির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বার্ষিক প্রায় সাড়ে ৩ কোটি ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ৪২০ কোটি টাকার সমপরিমাণ) হারে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হচ্ছে।
২০২৮ সালে এ কিস্তি পরিশোধের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে বার্ষিক প্রায় সাড়ে ৫ কোটি ডলার।
ঋণের কিস্তির সঙ্গে সুদ আলাদাভাবে পরিশোধ করতে হবে। সুদের পরিমাণ প্রায় ২ শতাংশ। দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের জন্য নেয়া ঋণ পরিশোধ করতে হবে ২০৪৮ সাল পর্যন্ত।
২০১০ সালে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ঘুনধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। রামু-ঘুনধুম অংশসহ প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা।
পরে রামু-ঘুনধুম অংশ স্থগিত রেখে নির্মাণ ব্যয় ১২ হাজার ৭১৩ কোটি টাকায় নামিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের মধ্যে তৈরি হওয়া নতুন রেলপথ দিয়ে ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। বর্তমানে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দুটি আন্তঃনগর ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত একটি দ্বিতীয় শ্রেণীর ট্রেন পরিচালনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
পাঠকের মতামত